আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি॥ ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে, মরি হায়, হায় রে— ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি॥ কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো— কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে। মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো, মরি হায়, হায় রে— মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি॥ তোমার এই খেলাঘরে শিশুকাল কাটিলে রে, তোমারি ধুলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি। তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে, মরি হায়, হায় রে— তখন খেলাধুলা সকল ফেলে, ও মা, তোমার কোলে ছুটে আসি॥ ধেনু-চরা তোমার মাঠে, পারে যাবার খেয়াঘাটে, সারা দিন পাখি-ডাকা ছায়ায়-ঢাকা তোমার পল্লীবাটে, তোমার ধানে-ভরা আঙিনাতে জীবনের দিন কাটে, মরি হায়, হায় রে— ও মা, আমার যে ভাই তারা সবাই, ও মা, তোমার রাখাল তোমার চাষি॥ ও মা, তোর চরণেতে দিলেম এই মাথা পেতে— দে গো তোর পায়ের ধূলা, সে যে আমার মাথার মানিক হবে। ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে, মরি হায়, হায় রে— আমি পরের ঘরে কিনব না আর, মা, তোর ভূষণ ব’লে গলার ফাঁসি॥ আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। Lyrics by: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর Music by: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Wednesday, October 19, 2011

এবার ফিরাও দৃষ্টি

মুছে ফেল যত তোমার ভাবালুতা-
ভুলে যাও মুগ্ধতা,
ঝেড়ে ফেল স্নিগ্ধতা,স্বপ্নচারিতা-কল্পনার নাম।
ফিরে এসো বাস্তবে!দেখ এই ধরাধাম-
বেঁচে থাকবার জন্য-
টিকে থাকবার জন্য,
কী নিরন্তর দুঃসহ সংগ্রাম।

দূর প্রবাসী কবিতা, তুমি দেখ-
অক্ষিগোলক প্রসারিত করে দেখ,
দারিদ্র্যের রুদ্ধ বাতায়ন
আজ তব তরে হয়েছে উন্মোচন-
বহু যুগের পর!
তোমার স্বপ্নভঙ্গ যে তার বড় দরকার।
দেখ ওই পাষাণ কারার দ্বার-
খুলেছে আজ আবার!

এসো কবিতা,দেখে যাও এইবেলা-
দারিদ্র্য ভরা মোর গৃহ ,
আছে নিরন্তর ক্ষুধার দাহ।
দেখে যাও-এসে শুধু এক্লা!
এসো এই ঘরে-বিদ্রুপের হাসি হেসে-
ওই ভ্র দুটি কুঁচকে,
দামি রুমাল চাপিয়ে নাকে-
বিরক্তি নিয়ে আজ এসে,
দেখে যাও,শুধু বোলনা-এ কিসের মড়ক?
এ কোন নরক!

হয়ত যাবে নাকে পচা গন্ধ-
জীবন্ত গলিত লাশের দূর্গন্ধ!
তবু এ নারকীয় নয়
বেদনার নয়-
নয় চিরবিদগ্ধ!!
দেখ এখানে এসে-এও এক জগৎ ,
কত সুবৃহৎ!
কত কঠিন,কত নিষ্ঠুর,কত পাষান-
ইহার অন্তরস্থান!!
দেখেছ কবিতা- এরেই জগত কয়।
সাক্ষাৎ নরক এ নয়!
এর অনলবান প্রদীপ্ত জ্বলজ্বলময়-
সব পোড়ায় তবু যমদাগ্নি নয়!!

এসো কবিতা,এই বেলায়-
জানাবে স্বাগত তোমায়,
দারিদ্র্যের সৈনিকেরা-
যারা চির দিশেহারা।
ওরা পরাবে তোমায় মালা-
ক্ষুৎপিপাসা অনাহারে মৃত,
নরশিশুর কংকাল,খুলি নির্মিত-
বেদনার মালা। ভুলবে প্রাণের জ্বালা!

তোমার আগমন হবে ক্ষুধিতের চিৎকারময়-
হয়ত জাগবে বিস্ময়!
জেনে রেখ এ দারিদ্রের শাপমোচন,
বিষাক্ত প্রাণ-
চির বহমান,দারিদ্র ধারণের দংশন।
দেখ ওই বাজে প্রলয়ের গর্জন-
বঞ্চিতের ব্যথার অস্ফুট বেদন,
ধ্বংস,মৃত্যুর আগমনী গান-
এখানে হয়েছে উপমেয় উপমান!!
এরাই কবিতার ছন্দ হবে,
গানের সুর হবে-
আর তীব্র ক্ষোভে অনলবানে বর্ষিত হবে।

ওহে কবিতা! তোমার যত মুগ্ধতা,
চিরদিনের কামনীয় স্বপ্নময়তা-
কল্পজগতকে আজ দাও ছুটি!
এদিকে ফিরাও তোমার দৃষ্টি।
তুলে ধর এবার, নীপীড়িত কাঙালের-
জীবন সংগ্রামের,
ব্যথাভরা এইসব চিত্রকল্প!
আঁকো ওই বৃহৎ ক্যানভাসে একটু অল্পসল্প!

No comments:

Post a Comment