আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি॥ ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে, মরি হায়, হায় রে— ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি॥ কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো— কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে। মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো, মরি হায়, হায় রে— মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি॥ তোমার এই খেলাঘরে শিশুকাল কাটিলে রে, তোমারি ধুলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি। তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে, মরি হায়, হায় রে— তখন খেলাধুলা সকল ফেলে, ও মা, তোমার কোলে ছুটে আসি॥ ধেনু-চরা তোমার মাঠে, পারে যাবার খেয়াঘাটে, সারা দিন পাখি-ডাকা ছায়ায়-ঢাকা তোমার পল্লীবাটে, তোমার ধানে-ভরা আঙিনাতে জীবনের দিন কাটে, মরি হায়, হায় রে— ও মা, আমার যে ভাই তারা সবাই, ও মা, তোমার রাখাল তোমার চাষি॥ ও মা, তোর চরণেতে দিলেম এই মাথা পেতে— দে গো তোর পায়ের ধূলা, সে যে আমার মাথার মানিক হবে। ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে, মরি হায়, হায় রে— আমি পরের ঘরে কিনব না আর, মা, তোর ভূষণ ব’লে গলার ফাঁসি॥ আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। Lyrics by: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর Music by: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Monday, July 30, 2012

ফেলে আসা ক্ষণ

আবারো ফিরে দেখি সে আগের মতোন
খুঁজে বেড়াই উড়াল দেয়া হারানো শালিক
সুদূর কোন তীরের গাছ-পাতায় শ্যামল ঘাসবন
গ্রাস করে নেয়া দুরাগত শৈশবের দুরন্ত ক্ষণ
আহ! রুদ্র ঘনকৃষ্ণে সিক্ত তরঙ্গায়িত মন।

মেঘেদের আগমনীতে জাগতো বিষ্ময়
বিধ্বংসী গর্জনে দিকভ্রান্ত হয়ে যেতো
নীড়মুখী উড়ে চলা বলাকার দল
খাবি খেতে ব্যস্ত হতো কৈ-মাছের ঝাঁক
আড়ম্বরে শেষ হতো এক দুরন্ত দিনের বাঁক।

এক পলকে ঘুরে আসা কোন বৈশাখী দুপুরে
তালপুকুরের কাদা-জলে হতো জড়াজড়ি
অবাক চোখে মুখোমুখি হত খেঁকশিয়ালদের দল
টলোমলো জলে খেলা জমানো সে দামাল বাতাস
চৈতি-বকুলের গন্ধে মাতাল উদাসী আকাশ।

হারিয়েছে সেই কবে বড়শি ফেলা বিলের ঝাড়
ঝাঁকিজালে আটকে পড়া রুইয়ের মুখ
নক্ষত্র খচিত রাতে তারাদের কথন
হারিয়েছে স্বচ্ছ সরোবরে একপশলা ঐকতান
বন-বাঁদাড়ে খোঁজ লাগানো জোনাকিদের গান।

গাছ-ছায়ারা আজ যোজন যোজন দূরের নীপবন
তবুও গোধূলী বেলায় ক্রমাগত খুঁজে ফিরি
আমার ফেলে আসা আপন ভুবন।



__________________আশরাফুল কবীর

Monday, July 16, 2012

২০০৫ সালে শ্রেষ্ঠ কবিতা মনোনীত আফ্রিকার এক কৃষ্ণাঙ্গ শিশুর অসাধাধারণ কবিতা (অনুবাদ)




জন্ম আমার যখন হয় কালো আমি ছিলাম///
কালো বর্ণ নিয়ে আমি বড় হয়ে গেলাম///
কালোই আমি থেকে যাই যখন রোদে যাই//
রোগে-শোকে কালোই থাকি, ভয় পেলেও তাই ///
রং আমার কালোই রবে///
মৃত্যু আমার যেদিন হবে///

ওহে আমার (সাদা) সাথী, শুন দিয়ে মন ///
গোলাপী রং নিয়ে তুমি কর জন্ম গ্রহন ///
সাদা রং ধারণ কর যখন হও বড় //
রোদে তুমি লাল হয়ে যাও শীতে নীল ধর///
রোগে তুমি সবুজ হও হলুদ হও ভয়ে ///
মৃত্যু বরণ কর তুমি ধূসর বর্ণ নিয়ে///

তার পরেও তোমরা সবাই বর্ণহীন থাক///
কালো বলে আমায় কী কৃষ্ণাঙ্গ ডাক? ///



______________মোহাম্মদ জমির হায়দার বাবলা

Wednesday, July 11, 2012

পাথুরে অশ্রু - নিনাদ

undefined
আমি ভুলে যাব - ভুলে যাবে তুমি ও
স্বচ্ছ বেলা শেষের আলোয় বলা কথা
প্রাণপণ প্রণয়ের আশ্বাসে মিশে যাওয়া
নিয়ম ভাঙার নির্ঝর উতসব ;
তা তা থৈ থৈ নিমগ্ন বেলা -- ভুলে যাব
ভুলে যাবার চিরাচরিত বৈচিত্রে
ভুলে যাব এই না থাকার চেয়ে নিবিড়ভাবে থাকা
হয়তো ------
খুঁজে নেব বিষাদ মেঘ- রুপোলি অশ্রুর ঝড়ো উচ্ছ্বাস
উড়ন্ত ডানার ভাঁজে বিব্রত প্রহরে লুকনো
ঠুনকো ঠুনকো আবেগ মেশানো আবরণ - বিলাস
টুকরো সুখে জল - মেঘ- অশ্রু নিংড়ে স্মৃতির পোট্রেট
গড়ে নেব আধো আধো জোনাক দীপ্তিতে ।

তবু চির উন্মনা মনে প্লাবনের টান এলে
অনির্বাণ বেঁচে থাকা ভোরের নুয়ে পড়া শিশির কণা
লাল টিপ ছুঁয়ে জলোচ্ছ্বাস আনলে ভুলে
তবে থামাবে কোন নিয়মে ?? বাঁধবে কোন ছলে ??
এক নিমেষেই বললে -
"উড়ে যাক বৈকালিক হৈমন্তী হাওয়ার ঘ্রাণ --এক তুড়িতেই" ।
তোমার এমন দুরন্ত দুঃসাহস দেখে আমার শ্লথ নিশ্বাস
উড়ন্ত প্রজাপতির মিশেল রঙে ডুবে যেতে যেতে হন্যে হয়ে খুঁজে
নীল চোখে সবুজের মাতাল স্পর্শ বিলাস ।

ভুলে যেওনা নিয়তির কাছে জমা রেখেছি
মায়া -ছায়া-মায়া
সাধ - বিষাদ- বিব্রত প্রহর
তুমি মায়ার উড়নিতে রেখেছিলে কদম কলি - ফুলঝুরি আর কত ;
সে আমার চেয়ে বেশি আর কেই বা জানত ??
তবু ছন্নছাড়া বিরহ - বেদনা নীল নীল বিড়ম্বনায় মুছে দিতে চায় মায়া নুড়ি
যখন আমি তোমার আকাশে উড়াতে চাই ইচ্ছেঘুড়ি --
আমি স্তব্ধ পাথর হতে চাই অক্ষত ইচ্ছেগুলো ঢেউ হয়ে আসে যখন
বিষাদ পাথর হওয়ার অধিকার নিশ্চয় আমার ছিল ।


_____________পাহাড়ী

Friday, July 6, 2012

নিভৃত জোছনার রঙ

undefined
স্থির এক জোড়া চোখ মেলে ধরে দূরে পথিক
ত্রিশূল ভ্রু'র কিনারে ভীরু দীপিকা দোলে
চিরল পাপড়ি পাতায় খুঁজে নেওয়া নিসর্গ সুখ
মরণ সুখে হয়তোবা কিছু ভুল - তবু সুখ সুখ ই
ভুল সে তো চিরকাল ই ভুল ; ভুল সুখে একাকার
একটা সীমান্ত চাই - দু দণ্ড জিরিয়ে নেওয়া
ব্যস এইতো !

অদূরে কাজরী নৃত্যের তালে নাচিছে কোন কিশোরী পায়েল
বাঁধনহারা খোঁপায় গুঁজে রাখা কদম হারিয়েছে কূল
কেশপাশে ঝরে পড়ছে কানন শোভা ;
এখানে নির্বান্ধব পৃথিবীর বাম পাশে শুয়ে আছে নিশ্চুপ ব-দ্বীপ
লাল রঙ এঁকে এঁকে যায় - কত নীল পড়ে থাকে নির্বাক
নাগরদোলার সেই বিনুনি মেয়েটিকে আজো ভোলা হল না
ক্ষণে ক্ষণে তোলপাড় শুরু করে দেয় পুরো ব-দ্বীপ জুড়ে
একটু একটু বেদনা মেখে নিয়ে কালচে চোষ কাগজের মত হয়;
তবু বেদনা ফুরালো না
একাকীত্বের অস্তিত্ব ঘিরে টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ শুনবার আকুলতা
যেন কি এক অদ্ভুত বিলাসিতা ! - কংক্রিটের এই বাংলো তে

কখনো ঝড়ো পথিক পথের সীমানায় থেমে যায়
ণ - হন্যে শূন্যতায় ছুঁতে চায় নিভৃত জোছনার রঙ
পলকে সরিয়ে দেয় উচ্ছ্বাস -আবেগ ; এমন
পরিমিতবোধের প্রাবল্যে আমি নিভে নিভে যাই
মনের দরোজা খুলে ভাসিয়ে দিয়েছি জলজ মায়ার পানসি নাও
সে আজ কতদিন হয়ে গেল !
অভিসারী রেখা আরেকটু প্রশস্ত হতে চাইলে
অবিনাশী ইচ্ছে আদিমতা খুঁজে ফেরে
প্রান্তর পেরিয়ে অনিকেত -তিলক পরবে বলে
নগ্ন বাহুর গভীরে মুখ ডুবিয়ে গভীরতা মাপে
পথিক ... একটু দাঁড়াও
আমার আনাড়ি কামিজের পারে জড়িয়ে দাও উন্মনা স্মৃতি
চঞ্চলতা সরিয়ে স্থির হলে কপালে এঁকে দাও লাল টিপ
এঁকেবেঁকে গেলে আলতো চুমু ;
আমি না হয় "সৃষ্টি" হবো বিন্দু গড়ে ।


_______________পাহাড়ী