আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি॥ ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে, মরি হায়, হায় রে— ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি॥ কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো— কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে। মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো, মরি হায়, হায় রে— মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি॥ তোমার এই খেলাঘরে শিশুকাল কাটিলে রে, তোমারি ধুলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি। তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে, মরি হায়, হায় রে— তখন খেলাধুলা সকল ফেলে, ও মা, তোমার কোলে ছুটে আসি॥ ধেনু-চরা তোমার মাঠে, পারে যাবার খেয়াঘাটে, সারা দিন পাখি-ডাকা ছায়ায়-ঢাকা তোমার পল্লীবাটে, তোমার ধানে-ভরা আঙিনাতে জীবনের দিন কাটে, মরি হায়, হায় রে— ও মা, আমার যে ভাই তারা সবাই, ও মা, তোমার রাখাল তোমার চাষি॥ ও মা, তোর চরণেতে দিলেম এই মাথা পেতে— দে গো তোর পায়ের ধূলা, সে যে আমার মাথার মানিক হবে। ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে, মরি হায়, হায় রে— আমি পরের ঘরে কিনব না আর, মা, তোর ভূষণ ব’লে গলার ফাঁসি॥ আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। Lyrics by: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর Music by: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Monday, August 25, 2014

সেই গল্পটা - পূর্ণেন্দু পত্রী

আমার সেই গল্পটা এখনো শেষ হয়নি শোনো
পাহাড়টা, আগেই বলেছি ভালোবেসেছিল মেঘকে
আর মেঘ কী ভাবে শুকনো খটখটে পাহাড়টাকে
বানিয়ে তুলেছিল ছাব্বিশ বছরের ছোকরা সে তো আগেই
শুনেছো
সেদিন ছিল পাহাড়টার জন্মদিন
পাহাড় মেঘেকে বললে; "আজ তুমি লাল
শাড়ি পরে আসবে"
মেঘ পাহাড়কে বললে;
"
আজ তোমাকে স্মান করিয়ে দেবো চন্দন জলে"
ভালোবাসলে নারীরা হয়ে যায় নরম নদী,
পুরুষেরা জ্বলন্ত কাঠ
সেইভাবেই মেঘ ছিল পাহাড়ের আলিঙ্গনের আগুনে,
পাহাড় ছিল মেঘের ঢেউ-জলে
হঠাৎ, আকাশ জুড়ে বেজে উঠল ঝড়ের জগঝম্প
ঝাঁকড়া চুল উড়িয়ে ছিনতাইয়ের
ভঙ্গিতে ছুটে এল এক ঝাঁক হাওয়া
মেঘের আঁচলে টান মেরে বললে;
ওঠ্ ছুড়ি!- তোর বিয়ে
এখনো শেষ হয়নি গল্পটা
বজ্রের সঙ্গে মেঘের বিয়েটা হয়ে গেল ঠিকই
কিন্তু পাহাড়কে সে কোনোদিনই ভুলতে পারল না
বিশ্বাস না হয় তো চিরে দেখতো পারো পাহাড়টার
হাড় পাঁজর,
ভিতরে থৈ থৈ করছে শত ঝর্ণার জল

Thursday, November 15, 2012

যাপিত জীবন

সব আলোতে আগুন নেই জেনে
তোমার চোখে আঙুল রাখি
সেটা শীত রাত ভীষণ শতাব্দীর।
বেঁচে আছি ঈশ্বর মেনে
যদিও তিনি প্রত্যক্ষ নন নাকি
এটা বলা পাপ? সকল নদীর

গভীরতা রাখেনা নৈতিক মাছ। সেদিন
তুমি তা প্রমাণিত কর ভুল। নির্ভুল
গান যা আমার কণ্ঠে গেয়ে ওঠে
অন্য কেউ। কেউ পথ ভাঙ্গে সারাদিন
কেউ কফির পয়সা করে উশুল
খেয়ে প্রেমিকার ঠোঁট,চিবুক। মোহগ্রস্ত ঠোঁটে

যারা উচ্চারণ করে “প্রেম” যদিও তারা
প্রত্যেক নারীই প্রেমিকা নয়। অবৈধ
শিরস্ত্রাণে পবিত্রতা শিক্ষা দেয় কিছু লোক
অথবা সকলেই আজ নষ্ট পুরোহিত কিংবা পোপ যারা
রাত্রিকালীন পোশাকে জমিয়ে রাখেন প্রতারণার বিবিধ
কৌশল যা দিবসে লোহিত করে মাঠের সবুজ। পতাকার শোক

ক্রমেই দীর্ঘায়ু লাভ করে। তোমার প্রশস্ত কপাল
আমার পতাকা আজ। এই কবিতা কতকাল !

 _________কালপুরুষ

প্রতিনিয়ত খালি হচ্ছে ভেতরটা

প্রতিনিয়ত খালি হচ্ছে ভেতরটা
যেন অবাঞ্ছিত হচ্ছি আমি এই পৃথিবীর কাছে
শত সহস্র মাইল পাড়ি দিয়ে যেন
সঁপে দিতে এসেছি ব্যর্থতার কাছে নিজেকে
প্রচণ্ড আশাবাদী ছিলাম, স্বপ্ন দেখতাম
কেন যেন আজ ধূসর হয়ে গেল সব
দোটানার আধিক্য মনের ভেতরে
চলছে সরণ ঘুরে ফিরে একই বৃত্তে
কাজের সমীকরণে ফলাফল যার শুন্য।

ইচ্ছে হয় পালিয়ে যেতে, ফেরারি হতে চায় মন
পিছুটান ছেড়ে, দূর সুদূরে, বহুঘুরে, বহুদুরে।
প্রয়োজনগুলোই যেন অপ্রয়োজনীয় আজ
অতীতের দরোজায় কশাঘাত আর হাহাকার
ফিরিয়ে দাও আমার অতীত, ফিরিয়ে দাও
আমি ফিরে পেতে চাই পুরনো জীবন আমার
আমি শুধরে নিতে চাই ভুলগুলো,
এভাবে আর নয়, আর নয় পরাজিত থাকা
যুদ্ধ করব বিবেকের সাথে, চাই সুযোগ আরেকবার।



____________আলইমরান

অপরাজিতা

undefined

একটি পাখি,
পৃথিবীর অগণন মৃত্যুরাশি চিনে নিয়ে
ফিরে আসে নীড়ে ।
আর তুমি ?
আমার অপরাজিতা
সূর্য চেন তুমি ?
জানো মেঘহীন শ্রাবণীর উৎস ?
রক্তকমল কেন কৃষ্ণচূড়া নয় ?
কখনও ছুয়েছ অদৃশ্য কুহেলি নরম দুহাতে ?
গোপনে গোপনে কত পাপ করেছে সঞ্চয়,
এই মহান পৃথিবী; চেয়েছো জানতে ?
চাওনি ;.... তুমি;.... কখনও;....
আমায় জেনে নিয়ে, সমস্ত জানার আকাঙক্ষা
ফেলেছ হারায়ে তুমি....।
আমারে নিয়েছ চিনে, এই ভেবে-
সমগ্র বিশ্ব চেনা ....
হয়েছে তোমার ;
এ এক সহজ বিস্ময়!
তবু যখন আবার ভোর হয়
ভাবো তুমি; “রাত্রি হলেই ভালো”
রাতের তিমিরে যখন প্রেম জ্বালে তার নিজস্ব আলো
সে আলোয়
পৃথিবীর কেউ কারো মুখ চিনে নিতে পারে না।
সে তবু চিনে লয়,
তার অভীষ্ট হৃদয়।
অসীম নিস্তব্ধতার মাঝে
জেগে ওঠে
প্রেমের অলৌকিক ভাষা।
সে ভাষায় ঘুমে বিভোর পৃথিবীর কয়না কথা কেউ
কেবল নিঃসঙ্গ নদীর পবিত্র ঢেউ
একা পথ চলে।
আর;
তার তীরে বসে আমাদের অশরীরী আত্না
তারা গোনে ধ্রুব আকাশের ।
...............শুনি
অস্পস্ট তারারা অচেনা ভাষায় কথা কয়
কেউ আর শোনে না তা
আমরা শুনি –
মৃত পাতাগুলি শান্তিতে মাটির বুকে ঝরে পড়ে
অত:পর
শব্দহীন জগতে
রহস্যময় শব্দ সৃষ্টি করে
আমাদের শরীর ক্লান্ত হলে,
অপরের চোখে যুগল ছবি আঁকি
যতক্ষন .. না .. ভোর আসে
পূর্বাকাশ লাল হতে শুরু করলে
যত দূরে সরে যাও তুমি
ততই নিকটে আসো প্রকৃতির খেয়ালে ।
একটি তারা হতে অপর একটি তারা
কত আর যেতে পারে দূরে?
একটি জীবন মৃত হয়
জন্ম লয় নতুন এক হৃদয়
যদিও শরীর ঝরে যায় শীতে
তবু স্বপনেরা কি মৃত হয় ?
কিংবা প্রণয় ?


_________কালপুরুষ
যখন একলা থাকি; গহীন সঙ্গী রাতের!
রাতের মৌনতা ভেঙ্গে- তন্দ্রানীল চেতনারা
নেমে আসে একে একে; অমাবশ্যা রাত্রিনীড়ে
সমুদ্র থেকে গভীরে- নীল চেতনার আবাহনে ।

রাতের চাদরে নীল লোহিত প্লাবন ভেঙ্গে-
উজান মনকে বলি-
আর করাল সমুদ্র স্বপ্নতলে ডুব দেয়া নয়;
রুপালি চাঁদ জ্বেলেছে আলো,
নক্ষত্রের মিলনের এইক্ষণে; এসো আজ-
জোনাক রাতের তারা হয়ে যাওয়া দেখি ।

প্রতিশ্রুতির হাতুড়ি পেটানো শব্দের কষাঘাতে
অতীতের ভবিষ্যত মুর্ছায় থাকুক আজ রাত!
ঘুমের দেবতা আজ কোমায় কাঁপুক-
স্বরাসরে; ---সকালের অপেক্ষায় ।

কল্পনাবিলাস শাদা জমিনের ফুল-
ঘুমিয়ে থাকুক আজ এখন এই মুহুর্তে;
কল্পনার আল্পনায় স্বপ্ন দেখাদেখি থাক ঝিমিয়ে আপ্রাণ;
ঘুমিয়ে থাক আঁতুর ঘরে নিদ্রাতুর পাখা মেলামেলি ।

আজ জীবনবন্দরে-
বহির্গামী জাহাজের নোঙ্গরটা ডুব দিয়ে থাক ।
গোপন শীতল জলতল-
লোনা জল ঢেলে ঢেলে সুনীল আবাহনের;
এসো এই ক্ষণে; এই ক্ষণে এসো-
আজ মিলনের পূর্ব-মুহূর্ত রচনা করি ।।


__________মাইনুল আমিন

Thursday, August 16, 2012

যে থাকে ভাবনা জুড়ে।

মাঝে মাঝে মনে হয়
তুমি খুব কাছেই আছ-
হাত বাড়ালেই তোমায় ছোঁব!
বাতায়নেও পাই তোমার সুবাস-
কি অপরূপ মোহনীয়তা!
ভালো লাগার পূর্ণতায় ভরে থাকে মন
যেন অটুট মায়ার বন্ধন।
রূপ কথায় শোনা গল্প তুমি
যেন জীবনের আরেক নাম!

তুমি থাক মিশে ওই কানির্শের সাথে
তাই দু চোখের দৃষ্টি তোমায় দেখে না।
তবু আমি বুঝি তোমার অস্তিত্ব-
আমার মরমে মরমে!
মায়া ভরা তোমার দু চোখ
চেয়ে থাকে আমার অন্তর জুড়ে-
যেন এক স্বপ্নপুরুষ
ঘুমিয়ে থাকে আমার ভাবনার জলচৌকিতে।



__________দীঘি

Monday, July 30, 2012

ফেলে আসা ক্ষণ

আবারো ফিরে দেখি সে আগের মতোন
খুঁজে বেড়াই উড়াল দেয়া হারানো শালিক
সুদূর কোন তীরের গাছ-পাতায় শ্যামল ঘাসবন
গ্রাস করে নেয়া দুরাগত শৈশবের দুরন্ত ক্ষণ
আহ! রুদ্র ঘনকৃষ্ণে সিক্ত তরঙ্গায়িত মন।

মেঘেদের আগমনীতে জাগতো বিষ্ময়
বিধ্বংসী গর্জনে দিকভ্রান্ত হয়ে যেতো
নীড়মুখী উড়ে চলা বলাকার দল
খাবি খেতে ব্যস্ত হতো কৈ-মাছের ঝাঁক
আড়ম্বরে শেষ হতো এক দুরন্ত দিনের বাঁক।

এক পলকে ঘুরে আসা কোন বৈশাখী দুপুরে
তালপুকুরের কাদা-জলে হতো জড়াজড়ি
অবাক চোখে মুখোমুখি হত খেঁকশিয়ালদের দল
টলোমলো জলে খেলা জমানো সে দামাল বাতাস
চৈতি-বকুলের গন্ধে মাতাল উদাসী আকাশ।

হারিয়েছে সেই কবে বড়শি ফেলা বিলের ঝাড়
ঝাঁকিজালে আটকে পড়া রুইয়ের মুখ
নক্ষত্র খচিত রাতে তারাদের কথন
হারিয়েছে স্বচ্ছ সরোবরে একপশলা ঐকতান
বন-বাঁদাড়ে খোঁজ লাগানো জোনাকিদের গান।

গাছ-ছায়ারা আজ যোজন যোজন দূরের নীপবন
তবুও গোধূলী বেলায় ক্রমাগত খুঁজে ফিরি
আমার ফেলে আসা আপন ভুবন।



__________________আশরাফুল কবীর